অপরাধ

সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে পরিকল্পিত অপহরণ,৬ মাস ২১ দিন পর উদ্ধার

  সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধি: ২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৬:০২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের ৬ মাস ২১ দিন পর অপহরণকারী চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, স্কুলছাত্রীর নামে থাকা জমিজমা ও সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে একাধিক চক্র দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আসছিল। তাদের যোগসাজশে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একই স্কুলের ছাত্রী রনজিনা আক্তার (২১) ও তার ছোট ভাই কামরুলকে ব্যবহার করে স্কুলছাত্রীকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করা হয়।
শোভাগঞ্জ কলেজ মোড়ের মিনি-বিশ্বরোডে পৌঁছামাত্রই ৮ সদস্যের একটি অপহরণকারী দল মিশুকযোগে ছাত্রীটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে রনজিনা আক্তারসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। রনজিনা ও তার মোবাইল ফোন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক কিছু নাম পাওয়া গেলেও অন্যান্যদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

অপহরণে জড়িতরা শুধু অপহরণই করেনি—তারা অপহৃতাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে এবং পরবর্তীতে চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে অপহৃতাকে বিভিন্ন বক্তব্য পড়িয়ে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে তা পরিবার ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া শুরু করে মোমিন, মাহিদ, শাকিল, আব্দুলসহ অন্য সদস্যরা।

তারা হুমকি দেয়—পুলিশ বা আদালতে উদ্ধার হলে যদি ধারণ করা বক্তব্য অনুযায়ী জবানবন্দি না দেয়, তাহলে ধারণকৃত ভিডিও দেখিয়ে তাকে, তার বাবা ও বড় বোনকে জেলে পাঠানো হবে। এমনকি প্রয়োজনে আবার অপহরণ বা হত্যা করারও হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে—স্কুলছাত্রীর চাচা আল-আমিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার ও ছেলে রাজুসহ অন্যান্য আত্মীয়রাও সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পূর্ব থেকেই বিভিন্ন স্ট্যাম্প ও খালি কাগজে স্বাক্ষর নিতে চাপ, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছিল।

৬ মাস ২১ দিন পর উদ্ধার

দীর্ঘ ৬ মাস ২১ দিনের পর অপহরণকারী চক্রের প্রধান আব্দুর রহিম ওরফে আব্দুলের কাছ থেকে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে পিতার জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়।

উদ্ধারের পর ভয়ভীতির কারণে ছাত্রীটি অনেক বিষয় বলতে চায়নি। পরে ধীরে ধীরে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয় এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে।

বর্তমানে মামলার আসামিরা অপহৃতার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মিথ্যা মামলা, অভিযোগ এবং সামাজিকভাবে হেয় করার নানা অপপ্রচারও চালাচ্ছে চক্রটি।

১৩ বছর বয়সী এই মেধাবী স্কুলছাত্রী বলছে,“আমি মানুষ হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। যারা আমার স্বপ্ন নষ্ট করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীন জানান,
“মামলাটি তদন্তাধীন। অপহৃতার গর্ভের সন্তান প্রসবের পর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”