গণঅভ্যুত্থানেও বদলায়নি রাষ্ট্রের চরিত্র, পাহাড়ে এখনো গুলি চলে: মাইকেল চাকমা

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আমরা আশার আলো দেখেছিলাম, ভেবেছিলাম রাষ্ট্র বদলাবে, পাহাড়ে দমন-পীড়ন কমবে। কিন্তু বাস্তবে এখনো সেনাবাহিনীর গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে”— এমন মন্তব্য করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর নেতা মাইকেল চাকমা।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: পাহাড়-সমতলের জাতিসত্তাসমূহের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাবি শাখা এই সভার আয়োজন করে।

মাইকেল চাকমা বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর গুম থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসনের কথা বললেই আমাদের নামের পাশে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’র তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের উপদেষ্টারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল বিজয়ী। তাই আমরা ভেবেছিলাম পাহাড়িদের নির্যাতনের অবসান হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। এক বছর আগে রুবেল ত্রিপুরাকে হত্যা করা হয়েছিল, এখনো সেই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পাহাড়ে এখনো সামরিক শাসন চলছে। শান্তিচুক্তি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ১১ দফা গোপন নির্দেশনাও বহাল রয়েছে। পাহাড়িদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক অপপ্রচার ছড়াতে প্রায়ই ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৯, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের গণআন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, কিন্তু তাদের অর্জন শূন্য।
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সরোয়ার সুজন বলেন, জমি হারানো, উচ্ছেদ হওয়া এবং বনভূমি বেসরকারি মালিকদের হাতে চলে যাওয়ার কারণে এই রাষ্ট্র কাঠামোয় আদিবাসীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা বলেন, আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে রাষ্ট্রের বহুজাতিসত্তার পরিচয় অর্থহীন হয়ে পড়বে।
সভায় পিসিপি শাখার সাধারণ সম্পাদক শামিন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাবি শাখার সাবেক সভাপতি প্রদীপ মারদী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, রাষ্ট্রচিন্তা এবং ছাত্র গণ-মঞ্চের নেতারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।