বিবিধ

রুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫

  রুয়েট প্রতিনিধি: ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৮:১২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ শীর্ষক কর্মসূচির অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ২১৭ নাম্বার কক্ষে এই কর্মসূচি আয়োজিত হয়।

১৫ই জুলাই (‌মঙ্গলবার) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে রুয়েট প্রশাসনিক ভবনে জুলাই আন্দোলনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ২৪ এর জুলাই গণহত্যার তথ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১০ টায় উপাচার্য ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক রুয়েটের প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে বেলা ১১:৩০ ঘটিকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করতে হবে’ জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ শীর্ষক আলোচনা সভায় রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন,”দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে জুলাই আন্দোলনের যে চেতনা ও উদ্দেশ্য তা ধারণ করতে হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রুমে আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সভায় তিনি আরো বলেন,”আন্দোলন হলেই বিজয় আসে না। ফ্রান্স বিপ্লবের নেতা নেপোলিয়ান বোনাপাট বলেছিলেন, খারাপ মানুষদের জন্য পৃথিবীকে যতটা না ভুগতে হয়েছে তার চাইতে বেশি ভুগতে হয়েছে যারা অন্যায় দেখেও চুপ থেকেছে। খারাপ কোন শাসকগোষ্ঠী যখন কোন দেশের ওপর চেপে বসে, তারা যখন অন্যায় নিপীড়ন চালাতে থাকে, তাদের চাইতে আমরা যাদেরকে ভালো মানুষ বলে মনে করি তারা প্রতিবাদী না হয়ে ওঠার কারণে নিপীড়করা আরও বেয়াড়া হয়ে ওঠে। গত দেড় দশক ধরে আমরা দেখেছি, কথা বলতে না দেয়ার সংস্কৃতি। কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরানো সম্ভব হচ্ছিলো না কারণ, ছাত্র-জনতার যে ক্ষোভ তা সংগঠিত করা সম্ভব হচ্ছিল না। ক্ষোভগুলোকে সংগঠিত করার জন্য নেতৃত্বের যে দরকার ছিল, তার ঘাটতি ছিল। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের সেই ঘাটতি পুরণ হয়। তাদের বীরত্বের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছি।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পুনর্জাগরণ’ আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম সরকার। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. বশির আহমেদ, ফলিত বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদের জিলানী ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এইচ এম রাসেল সহ জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ আহম্মদ চৌধুরী সহ বিভিন্ন অনুষদের ডীন, সকল পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, দপ্তর ও শাখা প্রধানগণ সহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

এসময় আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি বক্তব্যে অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম সরকার বলেন,”জুলাই আন্দোলন হয়েছিল গুম খুন, ভোট চুরি সহ সকল অবিচারের বিরুদ্ধে। বর্তমান ভিসির সরাসরি নির্দেশেই রুয়েটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদী, তারা কোনো অন্যায় কখনোই বরদাস্ত করেনা। জুলাইয়ের মুল স্পিরিটকে সামনে রেখেই রুয়েট চলবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে স্মৃতিচারণে আজকে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। আগামী দিনে রুয়েটের পক্ষ থেকে পঙ্গুত্ব বারণকারীদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। শহীদের আত্মা তখনই শান্তি পাবে যখন হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন হবে এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে।”

অনুষ্ঠানে যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বিন জাহিদ বলেন,”জুলাইয়ের স্মৃতি চারণ যদি করি, ৮ জুলাই রুয়েটে সরাসরি আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময়টা তে ‘আপোষ না সংগ্রাম’ স্লোগান থেকে আমর আপোষ না করতে শিখেছি। আমার মনে আছে, ল্যাবের এর একজন কর্মচারী বলেছিলেন রুয়েটে ২০ বছর চাকরি করেছি, এখন গেলে যাবে, ফ্যাসিস্ট কে সরায়ে ছাড়বো। এভাবেই সবাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো সেই সময়ে।”

যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ বিল্লাহ রিফাত বলেন,”জুলাই আন্দোলন শুধু ৩৬ দিনের ছিলো না, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা মূলোৎপাটনের আন্দোলন। জুলাইয়ে এই দেশ শহীদদের রক্ত রঞ্জিত হয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে ‘৪৭ এ, ‘৫২তে, ‘৭১এ রক্ত দিয়েছে। একটা জাতি আর কত রক্ত দিবে! পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি বাদ দিয়ে জুলাই কে ধারণ করে আমাদের এখন একতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই মাসে ছাত্র জনতা ও সর্বসাধারণের রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়। জুলাই গণঅভুত্থানকে পুনর্জাগরণ করার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করা হচ্ছে জুলাই গণঅভুত্থান পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫। এরই ধারাবাহিকতায় রুয়েটে আজকের কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: বেলা ১১ টায় পবিত্র কোরআন তেলওয়াত, সোয়া ১১ টায় জুলাই ২৪ গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে অতিথিবৃন্দ, শিক্ষকমণ্ডলী এবং শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ (জুলাই গল্প বলা) ও জুলাই ২৪-এ আহত যোদ্ধাদের শিক্ষা সহায়তা প্রদান।