রাবি প্রতিনিধি: ২৩ জুলাই ২০২৫ , ৩:৪১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহনের কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এই ঘোষণার পর রাকসু নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছরের প্রতীক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা ভাবতে শুরু করেন গণতান্ত্রিক চর্চার পথ যেন অবশেষে উন্মুক্ত হচ্ছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই আশায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার ছাপ। বাস্তবিক পক্ষে ঘোষিত রোডম্যাপ এখন কেবলই প্রশাসনিক কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ, বাস্তব অগ্রগতি খুবই ধীরগতির ও অনিশ্চিত।
প্রশাসনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, মে মাসের ১৩ তারিখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১৫ মে মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং ২৭ মে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি, জুনের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। অথচ জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসে দেখা যাচ্ছে, কোনো ধাপই কার্যকর হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
রাকসু নির্বাচন আয়োজনে বিলম্বের বিষয়ে স্টুডেন্টস রাইট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফাহির আমিন বলেন, যতদূর জানি তফসিল প্রস্তুত আছে। সম্ভবত কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই পরবর্তী সময়ের চাপগুলো কাটিয়ে উঠে তফসিল ঘোষণা করতে পারতো কিনা সে প্রশ্নও থেকে যায়। যদি কোনো চাপ থেকেও থাকে সেই চাপের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা সঙ্ঘবদ্ধ কোনো চাপ প্রয়োগ করছে না। সার্বিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা না হওয়ার বহুমাত্রিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, রাজনৈতিক দলের প্রভাব। দ্বিতীয়ত, এই চাপের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বলিষ্ঠ ভূমিকা না নিতে পারা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে বর্তমান প্রশাসন প্রথম দিকে যে পরিমাণ তৎপর ছিল, নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তা অনেকটাই কমে গেছে। তারা শুধু তারিখ পরিবর্তন করে আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। রাকসু বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। এখানে কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে রাকসুর তফসিল আটকে আছে। তবে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে কোনো বাধা আটকাতে পারবে না। অবিলম্বে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের শিক্ষার্থী সমাজের প্রাণের দাবি রাকসু নির্বাচনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিব।
রাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে দাবি প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেনের। নির্বাচন হতে ঠিক কতোদিন সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, রাকসু নির্বাচনের বিষয়টা আমরা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আবার রাকসু নির্বাচন হবে। ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী একটা অধ্যায় চলছে। এদিকে ছাত্র সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে যে খুব একটা ভালো করছে তাও নয়। সাংগঠনিক কোনো পদ-পদবী নেই। আলাদা আলাদা কথা বলে তারা। বিক্ষিপ্ত একটা অবস্থা। এসব কিছু মিলিয়েই একটু দেরি হচ্ছে। রাকসু নির্বাচনের জন্য যে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই তা বলবো না, কিন্তু সব কিছুর জন্য সময় লাগবে একটু।
তিনি আরও বলেন, গতকালও আমরা কমিশনের সবাই মিলে বসেছিলাম। নির্বাচন হতে ঠিক কতোদিন সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি, বার বার বসছি। ছাত্র সংগঠনের অনেকের সাথেই কথা বলেছি। মোটামুটি একটা পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। প্রশাসনেরও একটা চাপ আছে আমাদের উপর। আমরা এটাও বুঝতে পারছি যে বিলম্বিত হওয়ার কারণে ছাত্ররা আমাদের উপর বিরক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি সাংবাদিক সংগঠনগুলোও চাপে রাখছে।
শিক্ষার্থীদের ১ দফা দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নিশ্চয়তা চাইতেই পারে। তারা চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, করুক। আমরাও দেখছি বিষয়টা। আশা করি সকলের সহযোগিতা পেলে আমরা ঝামেলাবিহীন নির্বাচন দিতে সক্ষম হব।