উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: ১১ জুলাই ২০২৫ , ৮:২৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়ক মন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে বসত বাড়ি সহ-শতশত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখনও অর্ধশতাধিক পরিবার প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের হুমকির আশঙ্কায় দুঃশ্চিন্তায় সময় পার করছেন। ভাঙ্গনের কবল থেকে ঘর-বাড়ি হাঁস মুরগি,গবাদিপশু রক্ষার্থে কেউ কেউ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেনন। এদিকে ওই এলাকায় ২কুটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবন প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা রাস্তা ঘাট সবকিছু প্রতিমুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হত্তয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনতে হচ্ছে চর গোড়ক মন্ডল এলাকার মানুষজন। ধরলার তীরবর্তী এলাকার মানুষজন এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।এঅবস্থায় ধরলার এই ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেকসই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
চর গোড়ক মন্ডল ধরলা নদী ভাঙ্গন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা আলা বকস (৬৭) এর সাথে কথা বললে জানান, শেষ সম্বল বলতে ঘর-বাড়ি ভিটেমাটি কোনাও বোধহয় শেষ রক্ষা হয় না বাহে। ধরলার ভাঙ্গন বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে চলে যায়।নিজস্ব কোন জমিজমা নাই চার বছর ধরে অন্যের জমিতে দুইটি ঘর তুলে কোনমতে বসবাস করে আসছি সোটারো দিকে নজর পরেছে আগ্রাসী ধরলার। আলা বকস অশ্রু সিক্ত নয়নে প্রতিবেদকে আরও জানান দূঃখের কথা কি আর কমো বাহে, বাড়িঘর জমিজমা সবেছিল আমার (৬৭) বছর বয়সে ছয় ছয়বার বাড়িঘর ফসলি জমি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এখন আমি নিঃস্ব। জীবন জীবিকার তাগিদে আনন্দ বাজারে ছোট একটি চটির দোকানে সুঁই,সুতা,রশি বিক্রি করে যা পাই সেটা দিয়ে আমার স্ত্রী সহ- ডালভাত খেয়ে দুইটা ঘরের ছোট একটি বাড়িতে কোনমতে দিনাতিপাত করছি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিতে ধরলার ভাঙ্গন এসে বাড়ির পিছনে ডাকছে। এমতাবস্থায় বাড়িঘর সরিয়ে আমার শ্যালকের জমিতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি কিন্তূ অর্থের অভাবে সেটাও পাইতেছি না এখন আল্লাহ ভরসা দেখি কি হয়।
একই এলাকার সফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মাহামুদা বেগম জানান, নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাদের বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে সর্বোচ্চ ২০থেকে ২৫গজ দুরত্ব যে কোন মুহুর্তে বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হত্তয়ার আশঙ্কা করছি। তাঁরা আরও বলেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরলার ভাঙ্গন ঠেকাতে না পারলে শত শত বিঘা ফসলি জমি ঘরবাড়ি ভিটেমাটি পরিবার চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় যুবক আব্দুল কুদ্দুস জানান, ইতিমধ্যে জাবেদ আলী, সুলতান মিয়া, শুক্কুর আলী, মনভোলা মিয়া, আজগার আলীসহ অনেকের ঘরবাড়ি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও চর গোড়ক মন্ডলে ২ কুটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবনটি সহ পাঁচ শতাধিক পরিবার ধরলা ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে।
চর গোড়ক মন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান,গত বছর এই এলাকায় ধরলার তীব্র ভাঙ্গনে ৩০টি পরিবার হাফ কিলোমিটার রাস্তা শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সে সময়ে কতৃপক্ষকে জানানো হলে ৬/৭ হাজার জিওব্যাগ বরাদ্দ দিয়েছে সেটি দিয়েও ভাঙ্গন রোধ করা যায়নি। এবারেও তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। যেভাবে ভাঙ্গা শুরু হয়েছে তাতে,চর গোড়ক মন্ডলে ২ কুটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবনটি, স্কুল,মাদ্রাসা সহ- পাঁচ শতাধিক পরিবার শত শত বিঘা ফসলি জমি হুমকির মুখে। তাই ভরা বর্ষার আগেই ভাঙ্গন রোধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
নাও ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাছেন আলী জানান, ইতিমধ্যে আমি চর গোড়ক মন্ডলের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি।ওই এলাকা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায় আছি কারণ গত বছর নদী ভাঙ্গনে ৩০টি পরিবার আধা কিলোমিটার রাস্তা শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ৬/৭ হাজার জিওব্যাগ বরাদ্দ দিয়েছে সেটা দিয়েও ভাঙ্গন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। আজ কালের মধ্যে ভাঙ্গন রোধের জন্য কুড়িগ্রাম পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী বরাবরে আবেদন জানানো হবে।
কুড়িগ্রাম পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান,চর গোড়ক মন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে গত বছর ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আপাতত আমাদের কাছে এই মুহুর্তে জিওব্যাগ নেই আমরা জানি ওই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে জিওব্যাগ লাগবে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বরাদ্দ এলেই সেখানে জিওব্যাগ দেওয়া হবে।